ভাইয়ের পরিকল্পনায় হাসপাতালের কর্মচারীরা হত্যা করতে পারেন আনিসকে : বাংলা কাগজ’র অনুসন্ধান
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাংলা কাগজ : রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, সোমবার (৯ নভেম্বর) ১১টা ৫৫ মিনিট।
মাইন্ড এইড হাসপাতালের কিছু কর্মচারীর সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার আনিসুল করিম।









তখনই তাঁকে ঢোকানো হয় শব্দ নিরোধক একটি কক্ষে। যেটি স্টুডিও’র ন্যায়।
অর্থাৎ ওই কক্ষ থেকে শব্দ করলেও তা বাইরে যায় না।
আর ওই শব্দ নিরোধক কক্ষে ঢুকিয়েই তাঁকে উপুর ফেলে দেয় চারজন। ফেলে দিয়েই চেপে ধরে। সঙ্গে আরও যোগ দেয় চারজন।
আনিসুল করিমকে ফেলে দিয়ে মারধর শুরু করে হাসপাতালে কর্মচারীরা। এ সময় একজন (সম্ভবত হাসপাতালের ব্যবস্থাপক) পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
সঙ্গে যাতে কোনও শব্দ না হয়, সেজন্য কর্মচারীদের সতর্কও করে সে (দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি)।
একজন কর্মচারী তখন আনিসুল করিমের ঘাড় চেপে ধরে। অন্যরা ব্যস্ত ছিলো আনিসুল করিমের হাত বাঁধতে। এ সময় হাসপাতালটির কর্মচারীরা আনিসুল করিমকে সজোরে চেপে ধরে রাখে।
১১টা ৫৮ মিনিটে এক কর্মচারী অপর এক কর্মচারীকে ইশারা করলে সে বাইরে চলে যায়। ইশারাটি এমন ছিলো যেন কে এসেছে বা আসছে।
১১টা ৫৯ মিনিটে আনিসুল করিমকে উল্টানো হয়।
ওই সময় একজন সিসিটিভির দিকে হাত দিয়ে সেটি (ক্যামেরা) দেখান।
ওই সময়ই (১১টা ৫৯ মিনিটে) আনিসুল করিমকে ফোমের বিছানায় শোয়ানো হয়। তখন আনিসুল করিমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরের মিনিটে (১২টা) মগ দিয়ে পানি নিয়ে আসে একজন। তারও এক মিনিট পর আরও এক বাতলি পানি নিয়ে আসে এক কর্মচারী। তখন একজন বালতি থেকে পানি নিয়ে ফ্লোরে মগ দিয়ে পানি ঢালে। (সরেজমিনে সোমবার- ৯ নভেম্বর দিবগত রাত ২টার দিকে ওই কক্ষে গিয়ে প্রস্রাবের গন্ধ পাওয়া গেছে।)
তখন পানি ঢেলে তরল পদার্থ জাতীয় কিছু পরিস্কার করে ওই ব্যক্তি।
১২টা ১ মিনিটে অপর একজন কক্ষ মুছুনি নিয়ে এলে আরেকজন ওই জায়গাটি (প্রস্রাবের জায়গা) মুছেন।
তখনও করিমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর ওই সময়ও আনিসুল করিমের হাত উল্টো দিক থেকে বাঁধা ছিলো।
জায়গাটি মোছার পর ১২টা ২ মিনিটে অ্যাপ্রন পড়া একজন নারীকে (সম্ভবত ডাক্তার) ওই কক্ষে ঢুকতে দেখা যায়।
কক্ষে ঢুকে সে আনিসুল করিমের কপালে হাত দিয়ে কী যেন পরখ করে। সঙ্গে চোখ মেলেও দেখে সে।
এর পর গলার বাম পাশের অংশে চাপ দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ (কয়েক সেকেন্ড) ধরে রাখে ওই নারী।
ওই সময় সে নারীকে আনিসুল করিমের কপালে ধরা এবং অন্যান্য অংশে ধরাকে অপেশাগত মনে হয়েছে। এক্ষেত্রে সে অবজ্ঞার ছাপ রেখেছে স্পষ্ট।
১২টা ৪ মিনিটে ওই নারী মুঠোফোনের আলো জ্বেলে আনিসুল করিমের চোখ দেখে।
ওই সময় (১২টা ৪ মিনিট) সম্ভবত সে নারী হাসপাতালটির কর্মচারীদের বলে, আনিসুল করিম মারা গেছেন।
আর ঠিক তখনই আনিসুল করিমের হাতের বাঁধন খুলতে শুরু করে হাসপাতালটির কর্মীরা।
তখন ওই নারী কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
১২টা ৫ মিনিটে তড়িঘড়ি করে কক্ষটিতে ঢুকে অ্যাপ্রন পড়া আরও এক নারী।
দীর্ঘ দুই মিনিট চেষ্টার পর ১২টা ৬ মিনিটে আনিসুল করিমের হাতে হাসপাতাল কর্মচারীদের দেওয়া বাঁধন তারা নিজেরা খুলতে সমর্থ হয়।
ওই সময় (১২টা ৬ মিনিটে) আনিসুল করিমের হাতে মুঠোফোন জাতীয় একটি যন্ত্র ৩৫ সেকেন্ড (১২টা ৬ মিনিট ৬ সেকেন্ড থেকে ৬ মিনিট ৪১ সেকেন্ড) লাগিয়ে রাখতে দেখা যায় ওই দুই নারীর মধ্যে কক্ষে ঢোকা প্রথম নারীকে।
কক্ষে ঢোকা দ্বিতীয় নারী ১২টা ৬ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে আনিসুল করিমের হাতে প্রেশার মাপার যন্ত্র (স্টেথোস্কোপ) স্থাপন করে।
১২টা ৬ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে কক্ষটির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১২টা ৭ মিনিটে দুইজন নারীকেই স্টেথোস্কোপ দিয়ে আনিসুল করিমের বুকে ও হাতে ‘কী যেন’ করতে দেখা যায়।
১২টা ৮ মিনিটে কক্ষে ঢোকা প্রথম নারীকে আনিসুল করিমের বুকের বাম পাশে চাপ দিয়ে পাম্প করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ওই নারী আনিসুল করিমের বুকে চাপ দিয়ে ধরে রাখে।
১২টা ৯ মিনিটে আবারও ওই নারীকে বুকে পাম্প করতে দেখা যায়। পাম্পের মাঝখানে আবারও আনিসুল করিমের বুকে চাপ দিয়ে ধরে রাখে ওই নারী।
১২টা ১০ মিনিটে ওই নারী আবারও মুঠোফোনের বাতি জ্বালিয়ে আনিসুল করিমের চোখ দেখে আবারও পাম্প করা শুরু করে।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম আনিসুল করিমকে মেরে ফেলার এটিই মাইন্ড এইড হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ১৫ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ফুটেজ।
আনিসুল করিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো ক্যামেস্ট্রির ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম ৩ বছরের এক সন্তানের জনক। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।
ভাইয়ের পরিকল্পনায় হত্যা! : বাংলা কাগকের অনুসন্ধানি চোখ বলছে- আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল করিমের পরিকল্পনায়ই মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মীরা আনিসুল করিমকে হত্যা করে।
আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল করিম গণমাধ্যমের কাছে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার ভাই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার (৯ নভেম্বর) সাড়ে ১১টার পরে তারা আনিসুল করিমকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আসেন।’
‘কাউন্টারে যখন রেজাউল করিম ভর্তির ফরম পূরণ করছিলেন, তখন কয়েকজন কর্মচারি আনিসুল করিমকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাদের জানানো হয়, আনিসুল করিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর তারা আনিসুল করিমকে দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ বিষয়ক : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী : কমিউনিটি পুলিশিং দিবস আজ