নিজস্ব প্রতিবেদন, বাংলা কাগজ : নগরে-বন্দরে এখন ঢের নারি বাইকারদের সংখ্যা। দেখতেও লাগছে বেশ। সবমিলে অর্থ উপার্জন ও সময় বাঁচাতে করোনাভাইরাসের এ সময়ে ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে বাইকও বেঁছে নিচ্ছেন নারিরা।
বেশ কিছুদিন থেকে ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলছে এক কনের গায়ে হলুদের কিছু ছবি। ছবিতে কনে তাঁর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে শহরজুড়ে মোটরসাইকেলের র্যালি করছেন। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ঘিরে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেন কনে ফারহানা।
জানা গেছে- ফারহানা আফরোজ ২০০৭ সাল থেকে তিনি বাইক চালান। এক সাক্ষাৎকারে ফারহানা জানান, ‘আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি; তাই বাইক চালিয়েই গায়ে হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে এন্ট্রি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
নারিদের অফিসে যাওয়ার একমাত্র বাহন বাস। কিন্তু ভিড় ঠেলে সব বাসে উঠা সম্ভব হয় না অনেক সময়। বাসে চলাফেরা নানারকম নেতিবাচক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাই এক পর্যায়ে অনেক নারিই সিদ্ধান্ত নেন বাইক কেনার। পরিবারকে বুঝিয়ে রাজি করে মাস খানেক ট্রেনিং নিয়ে পুরোদস্তুর বাইকার হয়ে উঠেন কিছু নারি।
রাস্তায় নারি বাইকারদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ঢাকার রাস্তায় কয়েকবছর আগেও নারি বাইকার দেখাটা ছিল বিরল। এখন দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাস্তায় তাকালেই চোখে পড়ে নারিরা বাইক চালাচ্ছেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে নারি বাইকারদের সংখ্যা।
ইলমা জেবরিন বাচ্চাকে স্কুলে নামিয়ে দেওয়া, বাজার-ঘাট করা, এমন কি অনলাইনে অর্ডার করা পণ্য কাস্টমারের হাতে পৌঁছে দেওয়া এসবই সামলান বাইক চালিয়ে । তিনি বলেন, এসব কাজে একটা বাইক অনেকখানি সময় বাঁচিয়ে দেয়। আমিও অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করি বাইকে।
রোকসানা ইসলাম নামের আরেক বাইকার জানান- প্রথম দিকে মা রাজি হন নি, যদি এক্সিডেন্ট করি, তাহলে তো লাশও খোঁজে পাবে না – এমন সব কথা বলতেন। কিন্তু আমার অদম্য ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারি নি। আসাদগেটে এক আপু আছেন পরিচিত, তার কাছ থেকে বাইকের প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তারপর লিলিতে জয়েন করি। পরে লিলি ছেড়ে জয়েন করি ‘ও বোন’ এ। এমজিএইচ এর কোম্পানি হচ্ছে ও ভাই, এটার অংশ হচ্ছে ওবোন’। এখানে আছি দু’বছর । ভালোই লাগছে। কেমন নিজেকে স্বাধীন স্বাধীন লাগে। কাজটাকে আমি এনজয় করছি আবার আয়ও করছি। আয় কিন্তু খারাপ না, মাস শেষে পঁচিশ হাজার টাকা, বেশ চলে যায় আমার। এখন মা-বাবাও খুব গর্ব করেন আমাকে নিয়ে। একটা সময় আশেপাশের মানুষের নানা কথার যন্ত্রণা সহ্য করেছি, এখন কিন্তু তারাই আমার প্রশংসা করেন। প্রয়োজনে আমি অনেককে সাহায্য করতে পারছি।
উল্লেখ করা যেতে পারে, নারিদের কথা মাথায় রেখে ‘ওবোন’ নামে একটি সেবা চালু হয়েছে। নারি যাত্রীদের জন্যই ‘ওভাই’-এর বিশেষায়িত সেবা ‘ওবোন’। ‘ওভাই’ অ্যাপের অন্তর্ভুক্ত ‘ওবোন’ অ্যাপ দিয়ে যেকোনও নারি যাত্রি আরেকজন নারি বাইকারের সেবা নিতে পারছেন।
বিআরটিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে ২২ হাজার ৭৩৩ জন নারি। এতেই বোঝা যায় নগর-বন্দরের সড়কগুলোতে নারি বাইকারদের সংখ্যা বাড়ছে।