নিজস্ব প্রতিবেদন, বাংলা কাগজ ও ডিএমপি নিউজ : প্রতিবেশি-বন্ধুবর দেশ ভারতের আকাশে দেখা দিয়েছে শস্য বিনষ্টকারী পঙ্গপালের ‘কালোমেঘ’। তবে এসব পতঙ্গ রাতে উড়তে পারে না বলে অনেকেই একে রাতকানা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন ফসলখেকো। তবে যে যাই বলুন না কেন- পঙ্গপাল ধ্বংস করতে রাতেই ভারত যথাযথ-প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অর্থনীতি ও ক্ষমতার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পূর্বাভাস রয়েছে ভারতের। এক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে থাকতে পারে চীন। আর চীনের উহান রাজ্য থেকে করোনাভাইরাসের মতো মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন বড় গলার কাটা হয়ে দেখা দিচ্ছে পঙ্গপাল। যা ইতোমধ্যে পাকিস্তানে আক্রমণ করেছে। আক্রমণ শুরু হয়েছে ভারতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় শনিবার (২৭ জুন) সকালে লাখ লাখ পঙ্গপাল ঢুকে পড়ে। পঙ্গপালের দল উড়ে যায় দিল্লি লাগোয়া গুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে। যদিও গুরগাঁও বা দিল্লির কোনও ক্ষতি করে নি এসব পতঙ্গ, তবুও পঙ্গপাল দেশটির উত্তর প্রদেশের বড়সড় ক্ষতি করতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার ওপর আবার পঙ্গপালের দলকে উত্তর প্রদেশের দিকেই উড়ে যেতে দেখা গেছে।
অবশ্য হরিয়ানার ঝর্ঝর থেকে যে পঙ্গপালের দল গুরগাঁও আর দিল্লির দিকে গিয়েছে, সেটা শুক্রবার (২৬ জুন) রাতেই বোঝা গিয়েছিল।
এ ব্যাপারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞানের অধ্যাপক অম্লান দাস গণমাধ্যমকে বলেন, “এই পঙ্গপালের হানাকে প্লেগ বলা হয়। কয়েক দশক পর পর এরা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাকিস্তান হয়ে; রাজস্থানে ঢোকে এরা। ক’দিন ধরেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছিল যে গুরগাঁও, দিল্লি- এই অঞ্চল দিয়ে যাবে এরা। মূলত ভূট্টা, গম, ধানের মতো ফসল খেতে এরা ভালবাসে। আবার উষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলও চাই এদের। যদি একটা প্যাটার্ন দেখেন, তাহলে দিল্লির পর এরা গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চল, অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্তও আসতে পারে।”
“তবে সেটা থিওরিটিক্যালি। এতদূর এরা নাও আসতে পারে। কারণ পঙ্গপাল ডানা গজানোর পরে গড়ে ৩৬ থেকে ৪০ দিন বাঁচে। এই যে দলগুলো, হানা দিয়েছে তারা আগে থেকেই উড়ছে। আর গড়ে প্রতিদিন ১০০ কিলোমিটার মতো উড়তে পারে ওরা। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের আগে পরেই এরা ওড়ে। সেই হিসাব করলে আরও দিন পনেরো লাগতে পারে পশ্চিমবঙ্গে আসতে। কিন্তু ততদিন এত পঙ্গপাল জীবিত থাকবে কী না, সেটা বলা কঠিন,” ব্যাখ্যা করছিলেন অধ্যাপক দাস।
গুজরাট আর রাজস্থানে সরকারি গবেষণাগার আছে, যে প্রতিষ্ঠান পঙ্গপালের হানা নিয়ে আগাম সতকর্তা দেয়। সেই অনুযায়ী, প্রশাসন সাধারণ মানুষকে সতর্কও করেছিল। বলা হয়েছিল, দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে, আর থালা বাটি বাজিয়ে শব্দ করতে, যাতে পঙ্গপালের দল দূরে সরে যায়। তৈরি রাখা হয় পতঙ্গনাশক স্প্রে।
ভারতের এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তণ প্রধান গোভিন গুজার বলেন, “শব্দ বা সাইরেন বাজালে অথবা গাড়ির হর্ণ বাজালে পঙ্গপাল সরে যায়, আবার পতঙ্গনাশক ওষুধও স্প্রে করা যায়। এখন তো ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। সবটাই করতে হয় রাতের বেলা, যখন পঙ্গপাল গাছের ভেতরের দিকে ঢুকে আশ্রয় নেয়। ওরা রাতে উড়তে পারে না।”
পঙ্গপালের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার ব্যাপারে গবেষণা করেছেন মি. গুজার। তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে কৃষক যদি জৈব পদ্ধতিতে ফসল রক্ষা করতে চান, তাহলে নিম ফল থেকে তৈরি ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন।”
গুরগাঁও একেবারেই দিল্লির লাগোয়া, তাই ওই পঙ্গপালের প্লেগ যদি রাজধানীতে হানা দেয়, তাহলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে দিল্লি প্রশাসন।
একইসঙ্গে গুরগাঁওয়ের পাশেই দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাই দিল্লির এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সব বিমানের পাইলটদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছে।
মহামারি করোনাকালে পঙ্গপালের আক্রমণ থেকে খুব সহজে ও তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে বন্ধুবর ভারতের জন্য প্রার্থনা ও দোয়া করেছেন বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।