নিজস্ব প্রতিবেদন, বাংলা কাগজ : কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) মহামারির নেতিবাচক প্রভাব রোধকল্পে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্যাকেজগুলোর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ তহবিল, কৃষি ভর্তুকী, বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর স্থগিত সুদের উপর ভর্তুকিসহ ইত্যাদি খাতে সরকারের রাজস্ব খাত হতে অর্থায়ন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা এবং শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা বাবদ যথাক্রমে ২০ হাজার কোটি ও ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল ব্যবহৃত হবে যার বিপরীতে সরকার কর্তৃক সুদ ভর্তুকি প্রদান করা হবে।
এছাড়াও দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্যের অবস্থা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে উল্লেখিত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কীম চালু করা হয়েছে।
অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব রোধকল্পে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রবর্তনসহ নানামুখী কার্যক্রম ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে যার অধিকাংশই ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ওই কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নিমিত্তে ব্যাংকগুলোর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত প্যাকেজগুলোর সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। এছাড়া প্যাকেজগুলোর যথার্থ বাস্তবায়নকল্পে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখা ও
উপশাখার বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করাও অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভবপর হবে না, যা কাম্য নয়। এ প্রেক্ষিতে উল্লিখিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাগুলো অনুসরণীয়
হবে-
ক) কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণ বা বিনিয়োগ গ্রহীতার আবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাইপূর্বক দ্রুত ঋণ বা বিনিয়োগ মঞ্জুর বা বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রযোজ্য বিধি-বিধানের আলোকে ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদান সম্ভবপর না হলে সেক্ষেত্রে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আবেদনকারীকে বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
খ) ঋণ বা বিনিয়োগ আবেদনকারীদেরকে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রতিটি শাখায় আবশ্যিকভাবে একটি স্বতন্ত্র হেল্পডেস্ক গঠন করতে হবে এবং সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত তথ্যাাদি প্রদর্শন করতে হবে
গ) প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সার্বিক মনিটরিং কার্যক্রম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে
ঘ) দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য ও অনস্বীকার্য।
ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো এবং জিডিপির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভবপর হবে না। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে যাতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংগেুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।