নিজস্ব প্রতিবেদন, বাংলা কাগজ : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাতের জনতা, রূপালী ও অগ্রণী এবং বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যতে তুলে নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এসব জালিয়াতি করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় (আইবিপি), লোন ট্রাস্ট এগেনেস্ট রিসিপ্ট (এলটিআর), করপোরেট গ্যারান্টি এবং ভুয়া বন্ধকীর মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়- জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের একটি শাখা থেকে এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠান সাড়ে ১২ কোটি টাকার মূল্যের বন্ধকীর বিপরীতে নিয়েছে ১ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে এস আলম গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, এস আলম ট্রেডিং করপোরেশন, এস আলম রিফাইনড সুগার, এস আলম সুপার ওয়েল, এস আলম কোল্ড রোল স্টিল, এস আলম ভেজিটেবল ওয়েল এবং এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জালিয়াতি করে এসব অর্থ হাতিয়েছে নিয়েছে গ্রুপটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা গেছে- জনতা ব্যাংক নিয়ম বহির্ভূতভাবে এস আলম গ্রুপের ওই সাত প্রতিষ্ঠানকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাড়ে ১২ কোটি টাকা মূল্যের জমির বিপরীতে ১ হাজার ৯৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী- ওই পরিমাণ ঋণ ছাড় করতে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার সম্পত্তি বন্ধক রাখার নিয়ম রয়েছে।
অথচ নিয়মের কোনও তোয়াক্কা না করেই এস আলম গ্রুপকে বিপুল অংকের অর্থ ছাড় করে জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে- আইবিপির একটি নিয়ম অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ঋণ শোধ করার কথা এস আলম গ্রুপের। কিন্তু সেটি করে নি এ গ্রুপ।
এক্ষেত্রে দিনের পর দিন সময় বাড়িয়েই গেছে গ্রুপটি। ব্যাংকও তাতে দিয়েছে সায়।
পরে অবশ্য বর্তমানে এস আলম গ্রুপ জনতা ব্যাংকে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
আর ঋণ খেলাপির ব্যাপারে ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে- কোনও ঋণ খেলাপি কোনও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না।
অথচ বর্তমানে ঋণ খেলাপি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ দায়িত্ব পালন করছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবেও।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলা কাগজকে বলেন- আইন অনুযায়ী কোনও ঋণ খেলাপি কোনও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদে থাকতে পারেন না।
নানা অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির ব্যাপারে জানার জন্য এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মুঠোফোন নম্বরে মঙ্গল (২৭ অক্টোবর) ও বুধবার (২৮ অক্টোবর) যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রথম দিকের জালিয়াতির সময় জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করেছেন এস এম আমিনুর রহমান। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন।
জালিয়াতির ব্যাপারে জানার জন্য এস এম আমিনুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হলেও নিরুত্তর থাকেন এস এম আমিনুর রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এস আলম গ্রুপের জালিয়াতির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায় নি বর্তমানে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ।
এ ব্যাপারে আব্দুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও প্রথম দফায় সেটিতে কল ঢুকলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এর এক ঘণ্টা পর খুদে বার্তা পাঠিয়ে আবারও কল দেওয়া হয়। তবে তখন অপর পাশ থেকে জানানো হয়- নম্বরটি ব্যস্ত আছে।
জানা গেছে- এস আলম গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব ব্যাংক থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেগুলো হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা ও আগ্রাবাদ শাখা; রূপালী ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখা, লালদীঘির পূর্বপাড় শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা ও আমিন মার্কেট শাখা; জনতা ব্যাংকের লালদীঘির পাড় ও আগ্রাবাদ শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘির পাড় শাখাসহ আরও একটি শাখা।
জালিয়াতির ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
একইভাবে ফোন রিসিভ করেন নি অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস্-উল ইসলাম এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ওসমান আলীও।
এ বিষয়ক : ব্যাংক জালিয়াত-১ : অর্থ পাচার ও লুটপাট নিয়েই ছিলেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি!